একজন ভিক্ষুকের জীবন দেখে সাধারণ মানুষ দুঃখ পায় তবে আমাদের কাছে এমন এক গল্প আছে যা আপনাকে নিজের জন্য দুঃখিত করবে। এটি পাটনার একজন ভিক্ষুকের গল্প যার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
নাম তার পাপ্পু কুমার, বয়স: ৩৮ বছর।
পেশা: ভিক্ষা করা, সম্পত্তি: ১.৫০ কোটি
মাসিক ইনকাম: ১০ লাখ
বিহার রাজ্যের পাটনার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা যায় তাকে। রাস্তায় ভিক্ষা করাটাই তার কাজ। তবে এটিই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় নয়। কারণ ভিক্ষুক হলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুদের বিনিময়ে ঋণ দেন তিনি। এটা তার ব্যবসা। পাপ্পু ভিক্ষা করছেন গত ১০ বছর থেকে। ভিক্ষা থেকে প্রাপ্ত টাকা তিনি চারটি ব্যাংকে জমিয়েছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ দেড় কোটি টাকা।
পাপ্পুর জীবন এমন ছিল না। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় তার শরীরের একাংশ অবশ হয়ে যায়। সংসারে বাবা-মা নেই। ফলে পরিবারের অন্যরা তার পাশে দাঁড়ায়নি। যে কারণে জীবন বাঁচানোর জন্য ভিক্ষা ছাড়া তার বিকল্প কোনো পথ ছিল না। এ প্রসঙ্গে পাপ্পু বলেন, ‘আমি ৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি। গণিতে ৭২ পেয়েছিলাম। আমারও স্বপ্ন ছিল। এ জন্য আমি চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। অ্যাকসিডেন্টের পর আমার পরিবারও আমাকে ত্যাগ করে।’’
পাটনার রেলওয়ে জংশন থেকে শুরু হয় পাপ্পুর ভিক্ষা জীবন। গত বছর পুলিশ তাকে এই স্থান থেকে সরিয়ে দেয়। তখনই প্রথম পাপ্পুর সম্পদের বিষয়টি প্রকাশ পায়। তিনি যে একজন কোটিপতি তা প্রকাশ্যে আসে যখন RPF তাকে একটি বিশেষ অভিযানের সময় হেফাজতে নিয়ে যায় । পাপ্পুর চারটি এটিএম কার্ড পাওয়া গেলে পুলিশ কর্মীরা হতবাক হয়ে যায় – স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক এর। বেরিয়ে আসে তার ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা এবং একাধিক জমি কেনার খবর। শুধু তাই নয়, তখন জানা যায়, নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে সুদে ঋণ দিয়ে তার প্রতি মাসে আয় হয় ১০ লাখ টাকা।
পুলিশ পাপ্পুকে ভিক্ষা ছেড়ে সাধারণ জীবন যাপন করার পরামর্শ দিলেও পাপ্পু ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স ইন্সপেক্টর রাজেশ লাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘জানি না কেন সে এখনও ভিক্ষা চালিয়ে যেতে চাচ্ছে।’
পুলিশ তাকে পরামর্শ দেয়, ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। কিন্তু তাতে আগ্রহ দেখা যায়নি পাপ্পুর। সে মনে করে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে তাকে আর ভিক্ষা দেবে কে?
কি নিজেকে নিয়ে খারাপ লাগছে, অনেক?