ভারতের সবচেয়ে সম্মানজনক ও আকর্ষণীয় চাকরি হলো IAS (আইএএস) বা ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। প্রতি বছর দেশের লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী UPSC পরীক্ষা দিলেও , মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন এই পরীক্ষায় সফল হন। আজকের গল্পটি তাদের কাছে প্রেরণামূলক হতে পারে যারা প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে মাঝ পথেই নিজেদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যায়

ছেলেটির নাম বরুন বারানওয়াল (Varun Baranwal)। পুরো নাম শ্রী বারানওয়াল বরুণকুমার জগদীশ (Shri Baranwal Varunkumar Jagdish)। জন্ম ১৯৯০ সালের ৫ই অক্টোবর, মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার বৈসার নামক একটি ছোট শহরে। ছোট থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একজন ডাক্তার হওয়ার

২০০৬ সালে, দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার ৩ দিন পর তার বাবা হৃদরোগে মারা যান। তার দিদি একজন শিক্ষিকা ছিলেন , কিন্তু টিউশন এর টাকা সংসারের খরচ আর বাকি থাকা ঋণ শোধ করার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না । ফলে সংসারের দায়িত্বের বোঝা তার ঘাড়েই এসে পরে। এমন অবস্থায় সে পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাইকেল এর দোকানে সাইকেল সারাই এর কাজে লেগে পড়ে। তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা সেখানেই ছাড়তে হয় তাকে।

varun in his cycle shop
নিজের দোকানে সাইকেল সারাইয়ের কাজে বরুন

কিন্তু দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর দেখা যায় বরুন তার শহরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। বাড়িতে সবার চোখে তখন আনন্দাশ্রু। তার মা ঠিক করলেন ছেলেকে আর দোকানে কাজ করতে দেবেন না, তিনি নিজে দোকান চালাবেন আর সে পড়াশোনা করবে।

সে কাছের একটি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করে , কিন্তু ভর্তির ফি ছিল ১০,০০০ টাকা , যা তাদের সাধ্যের বাইরে। পড়াশোনা করার ইচ্ছাশক্তি দ্বিতীয়বারের মতো মৃতপ্রায় । কিছুদিন পর, সে যখন দোকানে কাজ করছিলো, তখন Dr. Kampi , যিনি তার বাবা মারা যাওয়ার আগে ওনার চিকিৎসা করছিলেন , তাদের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বরুনের কাছে তার ভবিষ্যতে কী করার ইচ্ছা ইত্যাদি প্রশ্ন করেন।
যখন তিনি কলেজ এর ব্যাপারে জানতে পারেন, তৎক্ষণাৎ নিজের পকেট থেকে ১০,০০০ টাকা বরুনের হাতে দেন কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ।

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বরুন ভেবে নেয় – যা ই হয়ে যাক , কলেজের মাসিক ফি (৬৫০ টাকা), সে নিজে কোনোমতেই দেবে না । সে খুব ভালো করে পড়াশোনা করবে এবং কলেজের প্রিন্সিপাল এর কাছে আবেদন করবে যাতে তার ফি মুকুব করে দেওয়া হয়। আর ঘটলোও এমনটাই। প্রতি মাসে কোনো না কোনো শিক্ষক তার কলেজ ফি দিয়ে দিতেন।

দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করার পর এলো বরুনের স্বপ্ন পূরণ করার দিন , অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজে পড়ে একজন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ফি অনেক বেশি হওয়ায় সে স্থির করে যে সে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়বে । তার পরিবারের শেষ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে তার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভর্তির টাকা অন্তত জোগাড় হয়ে যায়। এবারও তার একই জেদ, কলেজ ফি সে দেবে না। প্রথম সেমিস্টারে সে কলেজে প্রথম হয় এবং স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করে। ফলে স্কলারশিপ এর টাকাতেই তার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাকি দুবছর কেটে যায় ।

২০১২ সালে যখন সে ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্তিম বর্ষে পড়ছিলো , সে একটি Multinational কোম্পানি – Deloitte থেকে চাকরির সুযোগ পায়। শেষ পর্যন্ত সে আশা ফিরে পায় ,এবার তার পরিবারের সবার পরিশ্রমের দিন শেষ।

কিন্তু, এমন সময় কাহিনী পুরো পাল্টে গেলো। আন্না হাজারে’র দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব তার ওপর এতটাই পড়েছিল যে, জুন ২০১২ তে সে Deloitte কোম্পানিতে Join করার জন্য বাকি থাকা ছয় মাস UPSC পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু বই কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকাও তার কাছে ছিল না। এমন অবস্থায় একদিন এক ট্রেন যাত্রায় Hope নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উচ্চপদস্থ ব্যক্তি তার কথা শুনে তাকে বই কিনতে সাহায্য করে।

varun with anna
আন্না হাজারে’র সাথে বরুন বারানওয়াল

শেষ পর্যন্ত, আট বছরের কঠিন প্রচেষ্টার পর বরুন ২০১৪ সালে UPSC পরীক্ষায় ভারতে ৩২তম স্থান অধিকার করে।

varun with his mother
মায়ের সাথে বরুন

বরুন বারানওয়াল এখন গুজরাটের হিম্মতনগর এ অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর পদে নিযুক্ত আছেন। আজও তার সাফল্যের গল্প যুবসমাজ কে অনুপ্রেরণা যোগায়।

Prantosh Biswas
Author

A Devotee of Lord Shree Krishna 🦚 | Full-Stack Developer 🧑‍💻

2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Subhrajyoti Sen
Subhrajyoti Sen
1 year ago

So inspiring ❤️

Meghna Saha
Meghna Saha
1 year ago

সত্যিই অসাধারণ ❤️🌼