উত্তর দিনাজপুরের নামকরণ কে করলেন ? উত্তর দিনাজপুর জেলার কি প্রাচীন কোনো ইতিহাস আছে ? এপার বাংলা ওপার বাংলার দিনাজপুর কী করে বিভক্ত হলো?

কিছুদিন আগে টেট এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। যারা সফল হয়েছেন,  তাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ইন্টারভিউ তে জেলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞেস করে। আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আলোচনা করতে চলেছি উত্তর তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সম্পূর্ণ ইতিহাস। আশা করি এই লেখার মাধ্যমে আপনারা আমাদের জেলা সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন এবং আসন্ন ইন্টারভিউ গুলিতে আপনাদের এটি সাহায্য করবে।

ইতিহাসে প্রথম দিনাজপুর এর উল্লেখ পাওয়া গেছে প্রায় ১৫ শতকের প্রথম দিকে।

প্রাচীনকালে  অবিভক্ত দিনাজপুর পুন্ড্রু (Pundru) রাজ্যের অংশ ছিল। তাদের রাজধানী ছিল পুন্ড্রুবর্ধনে (বর্তমানে বাংলাদেশে), এবং আরও দুটি প্রাচীন শহর ছিল গৌরপুর (পরবর্তী কালে গৌড় ) এবং কোটিবর্ষা ( Kotivorsha, পরবর্তী কালে  বানগড়) ।

পরবর্তী কালে একাধিক গুপ্ত শিলালিপিতে এর উল্লেখ পাওয়া গেছে। এই লিপি থেকে জানা যায় গুপ্তরাও এক সময় এই অঞ্চল অধিকার করেছিলেন।

750 খিস্টাব্দ নাগাদ পাল বংশ এই এলাকা দখল করে ।  সেনরা 1143 সালে পালদের উৎখাত করে। 1204 সালে, বখতিয়ার খিলজি সেনদের পরাজিত করেন। খিলজির হত্যার পর, এটি গৌড় থেকে দিল্লির সুলতান কর্তৃক প্রেরিত বিভিন্ন গভর্নর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত ।

দিনাজপুরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এক রাজার নাম। সেই রাজা হলেন রাজা গণেশ।

১৪১৪ সালে সুলতান প্রথম আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজা গণেশ মসনদে বসেন। সিংহাসন আরোহনের পরই “দনুজমর্দন দেব ” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন  রাজা গণেশ।

এই নামে মুদ্রাও প্রবর্তন করেছিলেন রাজা গণেশ যার একদিকে লেখা ছিল “দনুজমর্দনদেব ” এবং অন্যদিকে “শ্রী চণ্ডী চরণ  পরায়না “।

raja_ganesha
রাজা গণেশ ও তার প্রবর্তিত মুদ্রা

তবে অনেকে মনে করেন রাজা গণেশ এবং দনুজমর্দন দেব এক নন ।  উভয়ই ১৫ শতকের গোড়ার দিকে গৌড়কে শাসন করেছিলেন। রাজা গণেশ ছিলেন বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ। আর দনুজমর্দন দেব ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের দেব বংশের কায়স্থ শাসক।

১৫৮৬ সালে, আকবর বাংলা জয় করেন এবং দিনাজপুর তাজপুর (বর্তমান ভাটোল  থেকে প্রায় ৩কিমি উত্তর-পশ্চিমে ) ও পাঞ্জারা (বর্তমান বাংলাদেশ) সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করেন ।

১৭১৩ সালে ঔরঙ্গজেব তার নাতিকে ১৫-১৬ টি গরু দিয়ে এই অঞ্চলে  নির্বাসিত করেন।

তারপর ১৭৬০ সালে মীর কাসিম ব্রিটিশদের সাহায্যে এই জমি দখল  করতে সক্ষম হন। ১৭৬৫ সালে, এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অধীনে পড়ে এবং মুর্শিদাবাদ থেকে শাসিত হয়। ব্রিটিশরা ১৭৭৬ সালে  দিনাজপুরকে একটি জেলায় পরিণত করে ।

১৮ শতকের পরবর্তী অংশে, ১৯ শতকের প্রথম দিকে জেলাটি সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের আবাসস্থল ছিল। ১৮০০-এর দশকের বাকি সব সময়ে জেলাটি তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল।

১৯০৫ সালে দিনাজপুর জেলার মানুষ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। কর দিতে অস্বীকার করে, হরতাল করে, আন্দোলন করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে।

১৯৪৭ সালে, দিনাজপুর জেলা ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হলে পশ্চিম দিনাজপুর ভারতের সাথে অবশিষ্ট থাকে।

১৯৪৭ সালের আর একটি উল্লেখযোগ্য কথা বলে রাখি। যখন ভারত স্বাধীন হয় তখন রেডক্লিফকে ভারত এবং পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি এর আগে কখনো ভারতে আসেননি। তাই তিনি ভারতের সীমানা নির্ধারণের জন্য ১৯৪১ সালের জনগণনার তথ্য বের করেন এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় যে জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি সেটি পাকিস্তানে এবং যে জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা বেশি সেটি ভারতে যুক্ত করেন। 1947 সালে স্বাধীনতার আগে ভারতের দুই দিনাজপুর এবং বাংলাদেশের দিনাজপুর মিলে একটিমাত্র জেলার অন্তর্গত ছিল। আর এই জেলায় সেই সময় হিন্দু এবং মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান ছিল।

রেডক্লিফ এই জেলাকে পাকিস্তানে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভারত সরকার আপত্তি করে জেলাকে দুটি অংশে বিভাজিত করে একটি অংশ তৎকালীন পাকিস্তানে এবং বাকিটা ভারতের সাথে যুক্ত করা হয়। বিভাজিত করা দিনাজপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে পশ্চিম দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়।

পরিবর্তীকালে ভাষার ভিত্তিতে যখন রাজ্য গুলির পুনর্গঠন হয় তখন বিহারের কিছু অংশ এই জেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৯২ সালের ১লা এপ্রিল , পশ্চিম দিনাজপুর জেলাকে বিভক্ত করে উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠন করা হয়।

 

 

Shami Ibrahim
Author

Shami Ibrahim is currently working in Central Bureau of Narcotics. He joined Indian Navy in Jan 2021. Medical board out due to injury in training. Cleared UPSC CDS in 2022. Loves playing chess ♟️