ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই রামায়ণ, মহাভারত এর গল্প শুনেছি। রামায়ণ ভারতের প্রাচীনতম মহাকাব্য। রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা যখন বনবাসে, তখন মহর্ষি বাল্মীকি রামের দুই যমজ সন্তান লব ও কুশ কে রামের জীবনী তথা রামায়ণ শুনিয়েছিলেন। রামায়ণ শব্দটি এসেছে রামঅয়ন শব্দযোগে, যার আক্ষরিক অর্থ রামের যাত্রা। ৭ টি কান্ড, ৫০০ সর্গ এবং ২৪,০০০ শ্লোক নিয়ে রচিত রামায়ণ-এ ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম-এর সাথে রাবণের যুদ্ধের কাহিনী বর্ণিত আছে। আজ রামায়ণের কিছু ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করছি।

 

১ . ভগবান রামচন্দ্রের দু’জন বোন ছিলেন

আপনাদের মধ্যে অনেকের কাছেই অজানা হতে পারে যে ভগবান রামচন্দ্রের দুই বোনও ছিলেন, শান্তাকুকবি। যদিও কুকবির উল্লেখ রামায়ণে তেমনভাবে নেই , তবে শান্তার বিষয়ে এতটুকু জানা যায় যে তিনি রাজা দশরথের স্ত্রী কৌশল্যার কন্যা ছিলেন। কিন্তু জন্মের কয়েক বছর পরেই রাজা দশরথ শান্তাকে অঙ্গদেশের রাজা রোম্পাদকে দিয়ে দেন। রাজা রোম্পাদ ও তার স্ত্রী বার্ষিণী ( যিনি কৌশল্যার বোন অর্থাৎ শান্তা তথা রামচন্দ্রের মাসি ছিলেন ) শান্তাকে লালন পালন করেছিলেন। বর্ণিত আছে যে বার্ষিণী সন্তানহীন হওয়ায় দশরথ তাকে নিজের কন্যা সমর্পন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে শান্তা অঙ্গদেশের রাজকুমারী হন।

আজও ভারতের বিভিন্ন স্থানে শান্তা দেবী রূপে পূজিত হন। তাদের মধ্যে হিমাচল প্রদেশ এর কুলু থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মন্দির এবং কর্ণাটকের শৃঙ্গিরি তে অবস্থিত মন্দির অন্যতম।
এমনকি শান্তার সাথে পূজিত হওয়া ঋষি শৃঙ্গির নামানুসারেই এই এলাকার নাম শৃঙ্গিরি।

২ . সীতা জনক রাজার আসল কন্যা ছিলেন না

রামায়ণের বিভিন্ন সংস্করণে সীতার পরিচয় নিয়ে ভিন্ন কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় সকল সংস্করণে এক, যা হলো সীতা রাজা জনকের স্ত্রী সুনয়না-র গর্ভস্থ সন্ততি ছিলেন না।
বলা হয়, জনক রাজা ভূমি পূজার সময় মাটি খুঁড়তে গিয়ে একটি সিন্দুকে সীতাকে পেয়েছিলেন , যা ভূমি দেবী তাকে লালন পালন করতে দিয়েছিলেন।
আবার রামায়ণের জৈন সংস্করণে বলা আছে, সীতা রাবন ও তার স্ত্রী মন্দোদরীর কন্যা ছিলেন। রাজ জ্যোতিষীরা ভবিষ্যৎবাণী করছিলেন যে এই কন্যা তার বংশের নাশ করবেন। ফলে রাবন সীতাকে পরিত্যাগ করেন এবং জনক রাজা তাকে পেয়ে তার লালন পালন করেন।

৩ . কাঠবেড়ালির গায়ের ডোরা কাটা দাগ

রামায়ণ অনুসারে শ্রী রাম যখন লঙ্কায় যাওয়ার জন্য বানরসেনার সাহায্য চেয়েছিলেন , তখন একটি কাঠবেড়ালি তাদের সাথে সেতু তৈরীতে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সে তার মুখে করে ছোট ছোট পাথর ও কাঁদা দিয়ে সেতু তৈরী করতে সাহায্য করছিলো , কিন্তু তার ধীরে কাজ করাকে নিয়ে বানরসেনা ঠাট্টা তামাশা করতে থাকে। তখন শ্রী রাম সেই কাঠবেড়ালি কে নিজের হাতের তালুতে নিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে তার কাজের জন্য তাকে বাহবা দিয়েছিলেন।
বর্ণিত আছে , এই কারণেই কাঠবেড়ালির পিঠে ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়।

৪ . লক্ষ্মণ ১৪ বছর না ঘুমিয়ে ছিলেন

শ্রী রামের প্রতি ভাই লক্ষ্মণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা আমরা সবাই জানি। এমনকি শ্রী রাম ও লক্ষ্মণ দুজনেই জনক রাজার দুই বোন জানকীঊর্মিলাকে বিয়ে করেছিলেন। শ্রী রামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কারণে তিনি নিদ্রাদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি ১৪ বছর না ঘুমিয়ে রাম-সীতার রক্ষা করতে পারেন। এর ফলে নিদ্রাদেবী লক্ষ্মণের ১৪ বছরের ঘুম তার স্ত্রী ঊর্মিলার চোখে দিয়েছিলেন।

৫ . শ্রীরামের অভিষেকের সময় লক্ষ্মণ উচ্চস্বরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাসছিলেন

রাবনকে হারিয়ে বনবাস থেকে ফেরার পর শ্রীরাম যখন অযোধ্যার সিংহাসনে বসবেন, তখন হঠাৎ লক্ষ্মণ হেসে ওঠেন। দীর্ঘ ১৪ বছর অনিদ্রার কারণে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন। এর পরেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং তার স্ত্রী ঊর্মিলা ১৪ বছরের ঘুম থেকে ওঠেন।


আরো পড়ুন : নাচতে নাচতেই মারা গেলেন শতাধিক মানুষ

পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন ও নিজের মতামত নীচে কমেন্ট এ জানাতে ভুলবেন না।

ধন্যবাদ ❤️🌼

 

Prantosh Biswas
Author

A Devotee of Lord Shree Krishna 🦚 | Full Stack Website and Mobile App Developer 🧑‍💻