শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও ব্যাপারটা সত্যি! ঘটনাটি ১৫১৪ সালের জুলাই মাসের এক সকালের। ফ্রান্সে তখন রেনেসাঁ শুরুর দিকে। হঠাৎ স্ট্রাসবার্গ শহরের ট্রফিয়া নামের এক গৃহবধূ সবাইকে চমকে দিয়ে নাচতে শুরু করলেন। এমনকি নাচতে নাচতে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। আশেপাশের লোকজন তো থ!
অনেকেই মনে করতে লাগলেন ট্রফিয়া-কে ভূতে ধরেছে। আবার অনেকে ঘটনাটি দেখে বেশ মজা পেয়ে হাততালি দিতে শুরু করলেন, বাহবা দিতে লাগলেন ট্রফিয়াকে।
বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। ট্রফিয়ার নাচ থামবার কোনো নাম গন্ধ নেই। সে নাচছে তো নাচছেই। সকাল থেকে রাত হয়ে যায়, তবু তার নাচ থামে না। বরং ক্রমশ দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে সেই নাচ। ছয় দিন পর্যন্ত এভাবেই নেচে চললো সে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরো কয়েকজন যোগ দিলেন তার সাথে। এভাবে যত দিন যায়, মানুষের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে।
একমাস পর দেখা গেল প্রায় চারশত মানুষ একসাথে নাচতে শুরু করেছে। এত নাচার ফলে প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক , ক্লান্তির ফলে মারা যেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত নাচ থামানোর জন্য মাঠে নামতে বাধ্য হলেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা অনেক ভেবে এক উপায় বের করলেন, শহরের মাঝখানে বড়ো মঞ্চ তৈরি করে সঙ্গীতের আয়োজন করা হলো। তারা ভাবলেন এতে হয়তো তাদের নাচ বন্ধ করা যাবে। অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার চেষ্টা করার মতো। কিন্তু এতে ফল হলো উল্টো। এই ডান্সিং মেনিয়া তে যোগ দিতে শুরু করেন আরো বেশি সংখ্যক মানুষ। ফলে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

রোগটির নাম ডান্সিং প্লেগ। পরবর্তীতে ১৫১৮ সালে রোগটি মহামারীর আকার ধারণ করলে, লোকজন চার বছর আগে ট্রফিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজে পান। John Waller তার লেখা A Time to Dance,A Time to Die : The Extraordinary Story of the Dancing Plague of 1518 বইটিতে এর পেছনে থাকা রহস্য উন্মোচন করেন।
১৯৫২ সালে Eugène Louis Backman এর লেখা Religious Dances in the Christian Church and in Popular Medicine বই থেকে জানা যায়, রাই ময়দা থেকে তৈরি পাউরুটি তে এরগোট নামের এক ফাঙ্গাসের উপস্থিতির জন্য এই রোগের উৎপত্তি। সেই সময় ফ্রান্সের ওই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছিল। তাই বেঁচে থাকবার চাহিদায় শেষ সম্বলটুকুও খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা বোধ হয়নি তাদের। ফলেই শেষ পর্যন্ত মহামারীর শিকার হতে হয়েছিল তাদের।
১৫১৪ সালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার সমাপ্তি কিভাবে ঘটেছিলো তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে মধ্যযুগে ইউরোপের বহু এলাকায় ডান্সিং প্লেগ আরো প্রায় ৭ বার দেখা দিয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই সেই স্টার্সবার্গ এলাকার।
১৮৪০ সালে মাদাগাস্কারে ঘটে যাওয়া সংক্রমণ ছিল এর চেয়েও ভয়ানক। মহামারীর কবলে পড়া রোগীরা কেনো পাগলের মত নাচছিল, তা তারা নিজেরাও জানেনা। শেষ পর্যন্ত তাদের হাত পা বিছানার সাথে বেঁধে, নানা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনেন চিকিৎসকরা।
এমনই মজার ফ্যাক্ট জানতে নজর রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ ❤️🌼