আগামী ১ তারিখ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী সমগ্র দেশ ও দুনিয়ার সামনে পেশ করবেন কেন্দ্রীয় বাজেট। তাই খবরের কাগজ থেকে বিজনেস নিউজ চ্যানেল সবখানেই স্পেকুলেশন শুরু হয়েছে এই বাজেটের প্রভাব ভারতীয় শেয়ার বাজারে কী হবে। আজকের এই প্রবন্ধে ও আগামী আরো কিছু প্রবন্ধে, আপনাদের প্রাবন্ধিক চেষ্টা করবে শেয়ার মার্কেটের সকল কিছু না হলেও প্রাথমিক ধারণা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে।
আজকের বিষয় শেয়ার বাজার কীভাবে কাজ করে ও শেয়ার বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রীয় বাজেটকে কেয়ার কেন করে?
ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে জানা যাবে ১৭ শতকে, ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শতাধিক জাহাজ দিয়ে যখন নানা রকম সামগ্রীর ব্যাবসা করতো তখন তাদের টাকার টান পরে। এই টান মেটাতে তারা সাধারণ মানুষমুখো হন- যাদের কাছে তাঁদেরকে দেবার মত টাকা ছিল। এবং এই সাধারণ মানুষ ডাচ্ কোম্পানি কে টাকা দেয় ও কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দেয় ব্যাবসার লাভের কিছু অংশ দেওয়া হবে এই বিনিয়োগে সামিল ব্যাক্তিদের। এইভাবে ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্ম দেয় পৃথিবীর প্রথম শেয়ার বাজারের।
কিন্তু আজকের দিনের শেয়ার বাজার এই ডাচ্ কোম্পানির ব্যাবসার থেকে অনেএএএএএএএকটা আলাদা। তো এই শেয়ার বা স্টক্ বাজার কে বুঝতে হলে ধরা যাক একটা আইসক্রিম কোম্পানি যার নাম অমুল (কোন প্রকার সাদৃশ্যতা কাকতালীয়)। অমুল কোম্পানি বিগত অনেক বছর ধরে বেশ ভালো ব্যাবসা করে আসছে এবং আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অমুলের কর্নধার মনে করেন তাদের ব্যাবসা কে এক্সপ্যান্ড করা প্রয়োজন।
কিন্তু এই এক্সপ্যানসনের জন্য না ব্যাঙ্ক লোন দিচ্ছে না কোন খুব বড় ইনভেস্টর ইনভেস্ট করতে চাইছে। তাই এবার অমুল কী করতে পারে? তারা তাদের কোম্পানি কে কোনো এক শেয়ার এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করে তাদের কোম্পানি কে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি বানাতে পারেন। ভারতে কোম্পানি গুলো নিজেকে, মুম্বাই-এর বম্বে স্টক্ এক্সচেঞ্জে(বিএসই) বা দিল্লীর ন্যাশানাল স্টক্ এক্সচেঞ্জে(এনএসই) তালিকাভুক্ত করতে পারে।
কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবার পর Initial Public Offering বা IPO’র মাধ্যমে তারা অমুল কোম্পানিতে ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আসতে পারে। IPO শব্দের সাথে অনেকেই হয়তো এখন ওয়াকিবহাল জোমাটো, পেটিএম ও নায়েকা-এর IPO’র দৌলতে।
তো এই IPO’র মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ধরা যাক ১০০ টাকার বিনিময়ে একক পরিমাণ মলিকানা পাচ্ছেন অমুল কোম্পানিতে। এই ভাবে অমুল কিছু শেয়ার বেচে তার আইসক্রিম ব্যাবসাকে ‘গ্রো’ করা শুরু করে।
এবার অমুল কোম্পানি ‘গ্রো’ করার কারণে তাদের কোম্পানির নাম ধীরে ধীরে সবাই জানা শুরু করলো। সবাই ভাবলো এই অমুল কোম্পানি নিশ্চয়ই খুব ভালোই ব্যাবসা করবে। তো ক্রমাগত অমুল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করলো। কেন?
কারণ শেয়ার কিছু হাতে গোনা সংখ্যাতেই আছে কিন্তু তার চাহিদা বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ জোগান স্থির অবস্থায় যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায় তাহলে দ্রব্যের দাম বাড়ে- অর্থনীতির এবিসিডি।
এবার ধরা যাক শ্রীযুক্ত পটল বাবু তার পটলের ব্যবসা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন, যেদিন অমুলের IPO আসে। কিন্তু পটল বাবু মনে করেন অমুল ভারত তথা এশিয়ার সব থেকে ভালো আইসক্রিম কোম্পানি যা কয়েক বছরের মধ্যে আরো ‘গ্রো’ করবে। তাই একজন এক্সিসটিং ইনভেস্টর যিনি অমুলের একক শেয়ার ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন তাকে সেই পরিমাণ শেয়ার ২০০ টাকা দিয়ে পটল বাবু কিনে নেন।
পটল বাবু ভাবেন: অমুল যদি আরো ‘গ্রো’ করে তাহলে এই শেয়ার তিনি পরে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এবং যা ভেবেছিলেন তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই সেই শেয়ার আলু বাবু কে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন ও আলু বাবু সেই শেয়ার ঝিঙে বাবু কে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন। এই হলো শেয়ার বাজারের অআকখ।
তবে ধরা যাক হঠাৎ করে জানা গেল অমুলের আইসক্রিমে ভেজাল ওষুধ থাকে। সবাই অমুল খাওয়া বন্ধ করে দিলো ও ধর্মতলায় সভা করে অমুলের কুশপুতুল পোরানো হলো। তাহলে অমুল আইসক্রিমের চাহিদা কমে যাবে। যার ফলস্বরূপ অমুল কোম্পানির লাভ কম হবে এবং সেই জন্যে বিনিয়োগকারীরা কম আগ্রহী হবে এই কোম্পানির শেয়ার কিনতে ও শেয়ারের দাম কমবে।
একই ভাবে ধরা যাক কেন্দ্রীয় সরকারের ১ তারিখের বাজেটের ফলে দুধের মূল্যবৃদ্ধি হল কিংবা অমুল আইসক্রিম প্রোডাকশনে প্রয়োজন কিছুর মূল্যবৃদ্ধি হল। অমুল কী তাহলে আর আগের মত লাভ পাবে? অর্থাৎ অমুলের শেয়ারের দাম কমবে। যেহেতু একবারের বাজেটে অনেক কিছু প্রভাবিত হয় তাই শেয়ার বাজারের একটা সামগ্রীক পরিবর্তন হয়। তাই সকল শেয়ার বিশেষজ্ঞেরা কেয়ার করেন কেন্দ্রীয় বাজেট কে।
শেয়ার বাজারের ফর্দে শেয়ার বাজার নিয়ে কী জানতে চান তা আমাকে সরাসরি জানান [email protected] ইমেইল আইডি তে।