বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভুজ নামটির সাথে আমরা প্রায় সবাই সুপরিচিত। উত্তর আমেরিকার মায়ামি, বারমুডা ও সান জোয়ান কে শীর্ষ করে গড়ে ওঠা এই ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলের উড়ো জাহাজ ও সামুদ্রিক জাহাজকে বেমালুম গিলে ফেলার ব্যাপারটা গল্প সিনেমার দরুন আমাদের প্রায় সবার কাছেই আকর্ষণীয়। এমনকি ক্রিস্টোফার কলম্বাসও তার বিবৃতিতে এই স্থানের অস্বাভাবিক ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
ঠিক এইরূপ ত্রিভুজাকৃতি মারণ ফাঁদ আমাদের ভারতেও অবস্থান করছে। বাঁকুড়ার কাছে পিয়ারবোদা, ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া ও ওড়িশার আমারডা রোড এয়ারফিল্ড কে তিনটি বিন্দু দ্বারা যোগ করলে উৎপন্ন ত্রিভুজকে ভারতের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বলা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে এই এয়ারফিল্ড গুলি স্থাপন করা হয়। এরপর এই এলাকায় ১৬ টি বিমান দুর্ঘটনা (সরকারি নথিভুক্ত, যা নিয়ে প্রচুর সংশয় রয়েছে) হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই যুদ্ধ বিমান।
ওড়িশার আমারডা রোড বিমান ঘাঁটিতে সেই সময় একের পর এক যুদ্ধ বিমান নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ করেই ধ্বংস হয়ে যেত। কারণ হিসেবে জানা যায় যে ওই স্থানে নাকি কম্পাস কাজ করতো না। ফলে পাইলট সহজেই দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়তো , কারণ তখনও বিমানে রাডার তেমন সুলভ হয়নি। সেই সময় মনে করা হলো যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তারতম্যের কারণে এই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু পরবর্তিতে যে সব বিমানে অত্যাধুনিক রাডার প্রযুক্তি রয়েছে , তাদের সঙ্গে একই ঘটনা (২০১৫ সালের Hawk বিমান দুর্ঘটনা) ঘটার পর চিন্তায় পড়েন বিশেষজ্ঞরা। পরে সঠিক গবেষণার দ্বারা সত্য উদ্ঘাটন হয়।

জানা যায়, এটি ঝাড়খণ্ডের খুবই কাছে অবস্থিত। ঝাড়খণ্ডের জাদুগোড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশ কিছু ইউরেনিয়াম খনি আছে। ইউরেনিয়াম খুবই তেজস্ক্রিয় মৌল। এই খনিগুলির ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তা যে কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের কার্যকারিতাকে বিফল করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই কারণে কোনো বিমান এই অঞ্চলে ঢুকলে তার রাডার ও কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর এইভাবেই দুর্ঘটনাগুলি ঘটে।
এরকম আরো একটি ত্রিভুজ আছে জাপানের কাছে দক্ষিণী চীন সাগরে, যা নিয়ে পরবর্তী প্রতিবেদনে আলোচনা করবো।