তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ — ক্রিকেট। অথচ অপার মহিমা তার। শব্দটি শোনা মাত্রই সত্বর তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সহস্রাধিক মুহূর্ত ভেসে ওঠে। শিহরণ জাগে। কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে থাকি আমরা। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে- সবুজ গালিচায় মহেন্দ্র সিং ধোনি–র হেলিকপ্টার শট, বিরাট কোহলি-র কভার ড্রাইভ কিংবা হর্ষ ভোগলে, রবি শাস্ত্রী, নাসের হুসেন, মাইকেল হোল্ডিং প্রমুখের মনোমুগ্ধকর ধারাভাষ্য। তবে আজ যে বিষয় নিয়ে দু-চার কথা বলবো, তা কোনও ক্রিকেটার বা ধারাভাষ্যকারকে নিয়ে নয়। ক্রিকেট ইতিহাসের তিনটি ময়দান নিয়ে। লর্ডস, এমসিজি বা ওয়াংখেড়ে-র মতো সুবিদিত স্টেডিয়াম নিয়ে নয়। তিনটি এমন ময়দান নিয়ে, যেগুলো ছিলো বাকি ময়দানগুলোর থেকে অনন্য।
১. সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ড, কেন্ট (ইংল্যান্ড)
ক্যান্টারবারির এই ময়দান হলো ‘কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব’-এর হোম গ্রাউন্ড। এছাড়াও চারটি একদিবসীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজক হলো এই ময়দান। যার মধ্যে ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ অন্যতম। পূর্বে ময়দানটির বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে ছিলো একটি লাইম ট্রি! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। একটি লাইম ট্রি। গাছটির উচ্চতা ছিলো প্রায় ২৭ মিটার। স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয় ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে। স্টেডিয়াম নির্মাণের পূর্ব থেকেই গাছটি উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলো। যতদূর জানা গেছে, স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় গাছটির বয়স ছিলো প্রায় চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছরের মতো। সুতরাং গাছটিকে না কেটে বিশেষ একটি আইন তৈরি করা হয়।সেই বিশেষ আইনে বলা হয়- ব্যাটসম্যান দ্বারা আঘাত করা বলটি যদি না ওভার বাউন্ডারি হয়, সেক্ষেত্রে গাছের কোনও অংশে বল স্পর্শ করলে চার রান প্রাপ্তি হবে ব্যাটিং টিমের এবং গাছে বল লাগার পরে যদি ফিল্ডার ক্যাচ ধরেন, তবে সেটাও ক্যাচ আউট হবে না। এরকম বৃহদাকৃতি গাছের ওপর দিয়ে ওভার বাউন্ডারি মারা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো। ইতিহাস বলছে- কেবল চারজন ব্যাটার গাছটির ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তাঁরা হলেন- আর্থার ওয়াটসন (১৯২৫ সাল), লিয়েরি কনস্টানটাইন (১৯২৮ সাল), জিম স্মিথ (১৯৩৯ সাল) এবং কার্ল হুপার (১৯৯২ সাল)। ১৯৯৯ সালে সেই গাছটিতে ‘হার্টউড ফাংগাস’ রোগ ধরা পড়লে আর্নেস্ট উইলিয়াম সোয়ানটন নামে একজন ইংরেজ ক্রিকেট লেখক গাছটির বদলি হিসাবে একটি ‘টিলিয়া’-এর চারা স্থাপন করেন মাঠের ভেতরেই। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে লাইম গাছটি দুই টুকরো হয়ে পড়ে এবং সেই স্থানে আর কোনও গাছ লাগানো হয়নি। উপরন্তু টিলিয়ার চারাটিকে যে স্থানে রোপণ করা হয়েছিলো, সেই স্থানেই ছেড়ে দেওয়া হয় শারীরিক বৃদ্ধির জন্য। তবে পরবর্তীকালে মাঠের বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়, ফলে টিলিয়া গাছটি বাউন্ডারির লাইনের বাইরে দন্ডায়মান হয়ে থাকে।

২. সিটি ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড, পিটারমারিৎজবার্গ (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেট ময়দানটি বিখ্যাত ছিলো বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে থাকা আস্ত একটি ‘ওক’ গাছের জন্য। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়- ইংল্যান্ডের ‘সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ড’-এর অনুকরণে নির্মিত হয়েছিলো ‘সিটি ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড‘। আইনও একই ।ব্যাটার কর্তৃক হিট করা বল যদি গাছের কোনও অংশে স্পর্শ করে, তবে সেক্ষেত্রে কোন নিয়ম প্রযোজ্য হবে তা নির্ধারণ করেছে ‘Maritzburg Oval Local Rule’; যে নিয়মে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘A ball touching any part of the tree counts as four’।

পিটারমারিৎসবার্গের এই ময়দান পুরুষদের দুটো আন্তর্জাতিক একদিবসীয় ম্যাচ (দুটোই ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচ) এবং কিছু স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- নামিবিয়ার বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকরের শতরান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার চামিন্ডা ব্যাসের ছয় উইকেট তুলে নেওয়ার মতো ক্রিকেটীয় ঘটনা। ক্রিকেট ময়দানটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। বলা যেতে পারে, এক প্রকার মহৎ উদ্যোগ। ময়দান কর্তৃপক্ষ ক্রিকেটারদের আমন্ত্রিত করতেন এবং তাঁরা এসে বৃক্ষরোপণ করতেন ময়দানের পার্শ্বস্থ অঞ্চলে। এই তালিকাভুক্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন- সচিন তেন্ডুলকর, চামিন্ডা ব্যাস, স্যার অ্যালেস্টার কুকের মতো কিংবদন্তিরা।

৩. ভিআরএ ক্রিকেট গ্রাউন্ড, অ্যামস্টেলভিন (নেদারল্যান্ডস)
উপরিউক্ত দুটি ময়দানের মতো এই ময়দানেও বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে একটি বৃহদাকৃতির গাছ ছিলো। ঘরোয়া প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই ময়দানে। এছাড়াও নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল এখানে বিভিন্ন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়ে থাকে। ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপও ম্যাচের আয়োজক ছিলো ভিআরএ ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল ৫০ ওভারে ৪৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, যে ম্যাচের আয়োজক ছিলো অ্যামস্টেলভিনের এই ময়দান। পুরুষদের পঞ্চাশ ওভারের একদিবসীয় ম্যাচে তৎকালীন সর্বোচ্চ স্কোর ছিলো এটি, যে রেকর্ড পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল (পুরুষ) ভেঙে দিয়ে নতুন কীর্তি স্থাপন করে।

এরকম আরো আপডেট পেতে নজর রাখুন আমাদের ওয়েবসাইট এ।
ধন্যবাদ ❤️🌼
Bahh.. Khub sundor toh.. 💚💚
দারুন…💚💚💚