বিগত একবছর বা তারও বেশী সময় ধরে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কিছু শব্দ- ক্রিপ্টো, ইথেরিয়াম, বিটকয়েন ইত্যাদি।এই প্রবন্ধটিতে আপনাদের প্রাবন্ধিক চেষ্টা করবে, যাদের কাছে এই শব্দ গুলি শুধুই শব্দ- তাদের একটু মানে করে দেওয়ার।
ক্রিপ্টো কারেন্সি কী সেটা বুঝতে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে কারেন্সি বা মুদ্রা, অর্থাৎ আমরা মুদির দোকানে গেলে যে নোট টা দিয়ে থাকি সেই নোটটা আসলে কী। কেউ যদি লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে দেখতে পাবেন ভারতীয় মুদ্রায় ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা থাকে I promise to pay the bearer বলে যত মূল্যের সেই নোটটি তা, যেমন ৫০০ টাকার নোটে লেখা থাকে I promise to pay the bearer the sum of five hundred rupees – এবং তার নীচে থাকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর।অর্থাৎ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এই নোটের মাধ্যমে বলতে চাইছে- যার কাছেই এই নোটটি থাকবে, তাকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ভারতীয় মুদ্রার ৫০০ টাকার সমান মূল্য দেবেন এবং এই রিজার্ভ ব্যাংক গভর্নরের ‘প্রমিস্’-এর জন্যই ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রচলিত মুদ্রা হল ভারতীয় রুপি। একই ভাবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে প্রচলিত মুদ্রা টাকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত মুদ্রা মার্কিন ডলার।
তাহলে এবার প্রশ্ন আসবে এই ক্রিপ্টো কারেন্সির বিনিময়ে মূল্য কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়? এই এক জায়গায় থেকেই আলাদা ক্রিপ্টো কারেন্সি।ক্রিপ্টো কারেন্সির জন্মের পেছনের ভাবনাই হল এই কারেন্সির কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে না। তার মানে কী লক্ষ-লক্ষ টাকা দিয়ে যারা ক্রিপ্টো কিনছেন তাদের টাকা মাটি? না!
আমাদের পৃথিবীতে মুদ্রা প্রচলনের পেছনে ছিল- মানুষের বিশ্বাস। একদম আদিম কালে সবাই যদি বিশ্বাস করতেন যে ২ বস্তা চাল কে আমি ২ বস্তা গম দিয়ে বা ২ বালতি দুধ দিয়ে কিনতে পারলে আমার সঠিক বিনিময় হচ্ছে তাহলেই তারা বিনিময় প্রথায় বেচাকেনা করতেন। যেহেতু আমরা সবাই এটা বিশ্বাস করি যে আমাদের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর আমাদের ৫০০ টাকার সমান মূল্য দেবেন বলেছেন তাই আমরা সেটাকে বেচাকেনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি। যদি সবাই বিশ্বাস করেন যে আমি কিছু পরিমাণ বিট কয়েনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরিমাণ মূল্য পাবো বা ৫ টে ইথেরিয়ামের পরিপ্রেক্ষিতে আমি কয়েক লাখ টাকা পাবো তাহলে- যেই ভাবে আমাদের পকেটস্থ ৫০০ টাকার নোটটির মূল্য ৫০০ ভারতীয় রুপি, ১টি বিটকয়েনের মূল্য ৩৫ কী ৪০ হাজার ভারতীয় রুপি।
এবার হয়তো পাঠকগণের মনে হচ্ছে যে এই যে বলা হলো ক্রিপ্টো কারেন্সির কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকে না সেটার প্রয়োজনীয়তাটা কী??? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পাবো ক্রিপ্টো কারেন্সির জন্মের পেছনে যে গল্প আছে তাতে। ২০০৮ সালে The Great Recession এ যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুলির ঠুঁটো জগন্নাথ অবস্থার নগ্ন রূপ কে ঘরের কোন থেকে এনে প্রকাশ রাজপথে সম্পূর্ণ পৃথিবীর সামনে তুলে ধরে, তখন জন্ম এই ক্রিপ্টো কারেন্সির।
যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই যে কোন সময় কিছু পরিমাণ সোনার বিনিময়ে যত পরিমাণ মুদ্রা ছাপাতে পারে( যাকে বলে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’)। যারা অর্থনীতি এক পাতা হলেও পড়েছেন তারা জানেন যত জোগান বৃদ্ধি পায় কোন কিছুর দাম তত হ্রাস পায়। তাই যত মুদ্রা ছাপানো হয় তত মুদ্রার মূল্য কমে অর্থাৎ দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায় ও জিনিসপত্রের দাম বাড়ে যার ফল ভোগ করে সমাজের দিন আনি দিন খাই গরীব মানুষ। ২০০৮ সালে জন্মানো ক্রিপ্টোকারেন্সি , বিটকয়েন এমনি একটি জিনিস যা কোনোদিনও ২১ মিলিয়নের বেশী হতে পারে না । তাই অন্য কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটলে বিটকয়েনে মুদ্রাস্ফীতি হবে না ( যেমন ধরুন কোন বড় অর্থনীতির দেশের সরকারের একবারে আইন করে ক্রিপ্টো কারেন্সি বন্ধ করে দেওয়া)।
তাহলে কী প্রাবন্ধিক আপনাদের বলছে ক্রিপ্টো তে ইনভেস্ট করতে? আপনাদের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে প্রাবন্ধিক একজন প্রথম বর্ষের ছাত্র যার কাছে ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কিত পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে আর কিছুই নেই। তাই লোকাল ট্রেনের লেখাকে উদ্ধৃত করে বলতে হবে “মালের দায়িত্ব যাত্রীর”
আরও পড়ুন : Crypto Currency -র এভাবে দাম কমার কারণ কি? Cryptocurrency কি এখনো কেনা উচিত ?